মুখের সিস্ট, টিউমার অপারেশন (Oral Cyst operation)

মুখের সিস্ট, টিউমার অপারেশন (Oral Cyst operation)
মুখের সিস্ট ও টিউমার অপারেশন হল মুখের ভিতরে (যেমন মাড়ি, চোয়াল, জিহ্বা, ঠোঁট বা গাল) গঠিত অস্বাভাবিক বৃদ্ধি বা ফোলা অংশের চিকিৎসার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
সিস্ট (Cyst) ও টিউমার (Tumor) এর পার্থক্য:
সিস্ট:
এটি সাধারণত তরল বা আধা-ঠাসা পদার্থভর্তি একধরনের ফোলা থলে, যা ধীরে ধীরে বড় হতে পারে। বেশিরভাগ সময় বিনাইন (অর্থাৎ ক্যান্সার নয়) হয়।
টিউমার:
এটি কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, যা বিনাইন বা ম্যালিগন্যান্ট (ক্যান্সার) – দুই ধরনেরই হতে পারে।
অপারেশনের কারণ:
1. ব্যথা বা ইনফেকশন হলে
2. চেহারার আকৃতি নষ্ট হলে
3. চোয়ালের হাড় নষ্ট করার ঝুঁকি থাকলে
4. ক্যান্সারের সম্ভাবনা থাকলে
5. দাঁত ওঠায় সমস্যা তৈরি করলে
অপারেশন পদ্ধতি:
1. সার্জিকাল এক্সিশন (Surgical Excision): পুরো সিস্ট বা টিউমার কেটে ফেলা হয়।
2. বায়োপসি (Biopsy): অপারেশনের আগে বা পরে টিস্যু পরীক্ষা করে দেখা হয় এটি ক্যান্সার কিনা।
3. জেনারেল বা লোকাল অ্যানেস্থেসিয়া দিয়ে করা হয়, নির্ভর করে সাইজ ও অবস্থানের ওপর।
4. কিছু ক্ষেত্রে হাড় বা দাঁত কেটে ফেলা লাগে – বিশেষ করে বড় টিউমার হলে।
অপারেশনের পর করণীয়:
✅মুখ পরিষ্কার রাখতে হবে
✅নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নরম খাবার খেতে হবে
✅ওষুধ ও অ্যান্টিবায়োটিক নিয়মমতো নিতে হবে
এপিসেক্টমি (Apicectomy)
এপি সেক্টমি (Apicectomy) একটি ছোট ধরনের মুখগহ্বর সার্জারি, যা তখন করা হয় যখন রুট ক্যানাল চিকিৎসা (Root Canal Treatment) সফলভাবে সমস্যার সমাধান করতে পারে না বা দাঁতের শিকড়ের আগায় (apex) ইনফেকশন রয়ে যায়।
এপিসেক্টমি অপারেশন কী ?

এটি দাঁতের শিকড়ের একেবারে শেষ প্রান্ত (apex) এবং সংক্রমিত টিস্যু কাটিয়ে ফেলে দেওয়া হয়, যাতে পুনরায় ইনফেকশন না ঘটে।
কখন এপি সেক্টমি করা হয় ?
রুট ক্যানাল বারবার ব্যর্থ হলে
দাঁতের শিকড়ে ক্র্যাক বা ক্ষত থাকলে
শিকড়ের শেষ প্রান্তে সিস্ট বা গ্র্যানুলোমা থাকলে
দাঁতের গঠন এমন যে রিট্রিটমেন্ট সম্ভব নয়
শিকড়ের চারপাশে হাড় ক্ষয় শুরু হলে

Cyst X-Ray
অপারেশন পদ্ধতি:
1. লোকাল অ্যানেস্থেসিয়া দিয়ে দাঁতের চারপাশে অসাড় করা হয়
2. দাঁতের শিকড়ের পাশে মাড়িতে ছোট চিরা কাটা হয়
3. সংক্রমিত অংশ ও শিকড়ের প্রান্ত কেটে ফেলা হয়
4. প্রয়োজনে retrograde filling দিয়ে শিকড়ের ছেদ বন্ধ করা হয়
5. শেষে সেলাই করে দেওয়া হয়
অপারেশনের পর কী হয়?
☑️মাড়ি একটু ফুলে যেতে পারে
☑️হালকা ব্যথা বা অস্বস্তি থাকতে পারে (ব্যথানাশক ওষুধে কমে যায়)
☑️সেলাই ৫–৭ দিন পরে খুলতে হয়
☑️১–২ দিনের মধ্যে নরম খাবার খেতে বলা হয়
☑️কিছু সময়ের জন্য দাঁত দিয়ে চাপ দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হয়
মিউকোসিল (Mucocele)
মিউকোসিল (Mucocele)
হলো মুখের ভেতরে, সাধারণত ঠোঁটের ভিতরের দিকে বা গালের ভিতরে দেখা দেওয়া এক ধরনের নরম, তরলপূর্ণ ফোলা (cyst-like swelling)। এটি মূলত লালা গ্রন্থির (salivary gland) ব্লক বা আঘাতজনিত কারণে হয়ে থাকে।

মিউকোসিল (Mucocele)
মিউকোসিল কেন হয়?
✅ঠোঁট বা মুখ কামড়ে ফেলা (habitual lip biting)
✅কোনো আঘাত বা ইনজুরি
✅লালা গ্রন্থির নালিতে ব্লক হওয়া বা ছিঁড়ে যাওয়া
✅দন্তচিকিৎসা বা মুখের অস্ত্রোপচারের পর
মিউকোসিলের লক্ষণ:
✅ঠোঁট বা গালের ভিতরে নরম ফোলা অংশ
✅সাধারণত ব্যথাহীন, তবে বিরক্তিকর
✅রঙ হালকা নীলচে বা স্বচ্ছ হতে পারে
✅মাঝে মাঝে বড় হয় বা ফেটে তরল বের হয়
✅আবারও ফিরে আসতে পারে (recurring nature)
চিকিৎসা :
1. ছোট মিউকোসিল:
অনেক সময় নিজে নিজেই সেরে যায়
ঠোঁট কামড়ানো বন্ধ করলে সেরে যেতে পারে
2. বড় বা বারবার হওয়া মিউকোসিল:
সার্জিকাল এক্সিশন (surgical removal): আক্রান্ত লালাগ্রন্থি কেটে ফেলে দেওয়া হয়
লেজার ট্রিটমেন্ট: কম ইনভেসিভ, দ্রুত আরোগ্য হয়
মার্সুপিয়ালাইজেশন: ফোলাটি কেটে একে ধীরে ধীরে শুকিয়ে দেওয়া হয় (বড় সিস্টের ক্ষেত্রে)

mucocele operation
অপারেশনের পর করণীয়:
✅মুখ পরিষ্কার রাখতে হবে
✅কয়েকদিন নরম খাবার খেতে হবে
✅ঠাণ্ডা সেঁক দিলে আরাম পাওয়া যায়
✅মুখ কামড়ানো বা ঘন ঘন স্পর্শ না করাই ভালো
পুনরায় হওয়ার ঝুঁকি:
যদি পুরো লালা গ্রন্থি না ফেলা হয়, তাহলে মিউকোসিল আবার ফিরে আসতে পারে। তাই অভিজ্ঞ মুখ ও চোয়াল সার্জনের মাধ্যমে অপারেশন করানো উচিত।
